তান্ত্রিক ও মূষিক

সুপ্রিয় লাহিড়ী



হায়দ্রাবঠ¾à¦¦

পাটনা আর কলকাতা মিলিয়ে প্রায় আট বছর ফিল্ডে মেডিক্যাল রিপ্রেজেনৠà¦Ÿà§‡à¦Ÿà¦¿à¦­, এরিয়া ম্যানেজার ও রিজিওনাল ম্যানেজার হিসেবে কাজ করার পরে, হঠাৎই সুযোগ এল, হায়দ্রাবাদ ে কর্পোরেট à¦¹à§‡à¦¡à¦•à§‹à§Ÿà¦¾à¦°à§à Ÿà¦¾à¦°à§‡ প্রোডাক্ট ম্যানেজার হয়ে জয়েন করার। পদোন্নতি বটে কিন্তু অর্থের উন্নতি নগণ্য। কোম্পানির নাকি তাই পলিসি। আমার কাজকর্ম দেখে খুশী হলে তবেই...।

আমি তখন তিরিশ পার করেছি, রিস্ক নিতে হলে এখনই, দেরী করলে পরে হয়তো আর পাবো না। তাই প্রথমে আমি আর কাকলি একটু দোলাচলে থাকলেও সাত পাঁচ ভেবে নিয়েই ফেললাম অফারটা। এবং তার জন্যে গত তিন বছরে একদিনও আফশোষ করিনি। প্রথম দিকে টাকাপয়সা ছিলো à¦—à§‹à¦¨à¦¾à¦—à§à¦¨à§à¦¤à ¿à¥¤ আজও মনে আছে প্ৰথম একটা 165 লিটার ফ্রিজ ইনস্টলমেনৠà¦Ÿà§‡ কিনে ডেলিভারির ঠ্যালা গাড়িটার সঙ্গে 5 কিলোমিটার হেঁটে আমার বাড়ি আসা আর তার অপেক্ষায় কাকলির রুদ্ধশ্বাস প্রতীক্ষাॠ¤ কিন্তু তা সত্ত্বেও আনন্দে ছিলাম, মজায় ছিলাম। আবার দু বছরের মাথায় যখন গ্রুপ প্রোডাক্ট ম্যানেজার পোস্টে প্রমোশন হলো তখন দুজনে বলাবলি করেছি, "নাঃ ডিসিশনটা ঠিকই নিয়েছিলামॠ¤"

এছাড়াও কোম্পানির দন্ডমুন্ডৠর কর্তা, সর্বশক্তিঠান à¦à¦•à§à¦¸à¦¿à¦•à¦¿à¦‰à¦Ÿà ¿à¦­ ডিরেক্টর সাহেব, (যাঁকে কেউ পছন্দ করতোনা), তিনিও ছিলেন আমার কাজে সন্তুষ্ট। বিশেষ চোখে দেখতেন আমাকে। সেই à¦à¦•à§à¦¸à¦¿à¦•à¦¿à¦‰à¦Ÿà ¿à¦­ à¦¡à¦¿à¦°à§‡à¦•à§à¦Ÿà¦°à§‡à ° (ইডি) অফিস থেকে হঠাৎ একদিন তলব এল। উত্তেজিত হলাম, ভয়ও পেলাম। গিয়ে দেখি কোম্পানির সব মাথারা আছেন। আর 'ইডি' তাঁদের মধ্যমণি হয়ে বসে।
জানলাম যে আমাদের কোম্পানি এক সরকারী আয়ুর্বেদিঠ• ইউনিভার্সঠ¿à¦Ÿà¦¿à¦° সঙ্গে কোলাবরেশন এ যাচ্ছে। আর্থ্রাইটঠ¿à¦¸ এর জন্যে তারা নাকি এক বৈপ্লবিক ওষুধ বার করেছে, আমাদের কোম্পানি সেটির এক্সক্লুসঠ¿à¦­ মার্কেটিং রাইটস পেয়েছে। 'ইডি' সাহেব এই à¦ªà§à¦°à¦œà§‡à¦•à§à¦Ÿà§‡à ° কর্তা আর আমাকে প্রোডাক্ট ম্যানেজমেঠ¨à§à¦Ÿ টিমের উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে à¦ªà§à¦°à¦œà§‡à¦•à§à¦Ÿà§‡à ° দৈনন্দিন কাজকর্ম দেখার জন্যে মনোনীত করা হয়েছে। আনন্দ হলো, একটু ভয়ও পেলাম আবার মনে একটু দুরাশাও জাগলো। যদি এর সাথে বাবুরা ট্যাকাকড়ি এট্টু বাড়ায়। উঁহু, দেখা গেলো সে গুড়ে বালি।

যাই হোক কাজ শুরু হলো। মাস খানেক পরে জানলাম যে আয়ুর্বেদিঠ• ইউনিভার্সঠ¿à¦Ÿà¦¿ থেকে তাদের রিসার্চ, প্রোডাক্ট à¦¡à§‡à¦­à§‡à¦²à¦ªà¦®à§‡à¦¨à à¦Ÿ এবং প্রোডাকশনৠ‡à¦° এর বড়কর্তা হায়দ্রাবাদ ে আসছেন, আমাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে। তিনি নাকি বিখ্যাত বৈদ্য আবার তান্ত্রিকॠআমার ওপরেই তাঁর আপ্যায়নের ভার পড়লো। 'ইডি'র সুন্দরী à¦¸à§‡à¦•à§à¦°à§‡à¦Ÿà¦¾à¦°à € টিনা আমাকে কান ফিসফিসিয়ে বললো যে আমাকে ওঁর হোটেলে মিটিংয়ে থাকতে হবে আর আপ্যায়ন এর জন্যে স্কচ হুইস্কির ব্যবস্থা করতে হবে। তখন স্কচ-টচ এখানে এত সহজলভ্য ছিলোনা। যাই হোক বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করে একটি মহার্ঘ্য বোতলের ব্যবস্থা করে আমি গেলাম। 'ইডি' আগেই পৌঁছেছেন। গিয়ে তান্ত্রিক মহাশয়ের দর্শন লাভ করে আমি প্রায় মূর্ছা যাই আরকি। 6 ফিট 3 ইঞ্চি লম্বা আর অন্তত 150 কেজি ওজনের এক দৈত্যমানব। পরনে রক্তাম্বর, গলায় এই মোটা রুদ্রাক্ষৠর মালা আর চোখগুলো টুকটুকে লাল। তাকাতে অস্বস্তি হয়। একদম গল্পের তান্ত্রিক!

সেই সন্ধেবেলা মিটিং আর তারপর অনুপান সহযোগে ইটিং চললো রাত 12টা অব্দি। ভেবেছিলাম তান্ত্রিকৠর প্রসাদে স্কচের ছিটে ফোঁটা আমার কপালেও জুটবে ('ইডি' ও রসে বঞ্চিত ছিলেন)। কিন্তু সে গুড়েও বালি। সেই মহা তান্ত্রিক এক জায়গায় বসে একটি 750 মিলি বোতল আর 3 প্লেট চিকেন টাংরি কাবাব একাই উদরস্থ করলেন। মিটিংয়ে ঠিক হলো এর পরে আমাকে যেতে হবে সেই ইউনিভার্সঠ¿à¦Ÿà¦¿à¦¤à§‡à¥¤ স্বচক্ষে সেখানকার অভূতপূর্ব à¦•à¦¾à¦¨à§à¦¡à¦•à¦¾à¦°à¦–à ¾à¦¨à¦¾ দেখে à¦®à¦¾à¦°à§à¦•à§‡à¦Ÿà¦¿à¦‚à Ÿà§‡à¦° মশলা পাতি জোগাড় করতে।


à¦†à§Ÿà§à¦°à§à¦¬à§‡à¦¦à ¦¿à¦• ইউনিভার্সঠ¿à¦Ÿà¦¿

এই বিখ্যাত ইউনিভার্সঠ¿à¦Ÿà¦¿ থেকে প্রথম যে প্রোডাক্ট আমাদের কাছে আসবে, তার নাম হলো 'সুচল'। আর্থ্রাইটঠ¿à¦¸ অর্থাৎ বাতব্যাধির জন্যে। সবাই জানে যে এলোপ্যাথিঠচিকিৎসায় আর্থ্রাইটঠ¿à¦¸ এর কোনো ভালো ওষুধ নেই। পেনকিলার পর্যন্ত তার দৌড়। এখন কিছু কিছু বেরোচ্ছে, তখন তো ছিলোই না।
এই 'সুচল' নাকি হাজার বছর পুরোনো আয়ুর্বেদিঠ• রসায়ন মতে তৈরী অব্যর্থ দাওয়াই। পরের মাসে একদিন ভোর বেলায় এসে নামলাম স্টেশনে। ছিমছাম পরিষ্কার জায়গা। স্টেশনের বাইরে এসে এদিক ওদিক দেখছি, এমন সময় একদম এথনিক গুজরাতি সাজপোশাকে, কিন্তু গুজরাতিদেঠ° মধ্যে বেশ বিরল, খ্যাঙরা কাঠির মত চেহারার এক ব্যক্তি এসে নিজের পরিচয় দিলেন, তান্ত্রিক মহাশয়ের ব্যক্তিগত সহায়ক। আমি মনে মনে ভাবলাম, হায়রে, ওই পর্বতের এমন ছুছুন্দর সদৃশ চেলা!
কিন্তু ইউনিভার্সঠ¿à¦Ÿà¦¿ ক্যাম্পাসৠঢুকে আমার চক্ষু চড়কগাছ। সুবিশাল ক্যাম্পাস, প্রশস্ত, নানা রকম ফুল ফলের গাছ, বাগান দিয়ে সুন্দর করে সাজানো। ক্যাম্পাসৠঢুকে প্রায় 20 মিনিট চলার পরে গাড়ি অতিথিশালাৠপৌঁছলো। এর থেকেই বোঝা যাবে ক্যাম্পাসৠর আয়তন। অতি সুন্দর 4 স্টার হোটেলের মত ব্যবস্থা। ঢুকে খবর পেলাম, আজ তান্ত্রিক স্যার ব্যস্ত, তাই ক্ষমাপ্রাঠ্থী, তাই কাল সকালে তিনি আমার সঙ্গে প্রাতরাশ করবেন এবং তারপর আমরা রিসার্চ ল্যাবরেটরঠও ফ্যাক্টরি পরিদর্শনে যাবো।
আমার তো মজাই হলো, বড় কোম্পানির ক্ষুদ্র ভৃত্যের এমন অবসর মেলে না। চর্ব চোষ্য খেয়ে আর বিরাট ক্যাম্পাসৠঘুরে সন্ধেটা ভালোই কেটে গেলো। কিছু পানের আশা করেছিলাম, কিন্তু সে গুড়েও বালি। সেই মোরারজি দেশাইএর (শিবাম্বু খ্যাত) সময় থেকেই গুজরাত মদ্য বর্জিত প্রদেশ।

পরদিন সকাল 9টায় পর্বত প্রমাণ তান্ত্রিক উপস্থিত হলেন এবং প্রাতরাশ এ রাশি রাশি খাবার, যেমন দুটি ধোসা, আধ ডজন ডিম সেদ্ধ, আট পিস ব্রেড তার সঙ্গে প্রায় 100 গ্রাম মাখন ইত্যাদি ভক্ষণ করলেন। অতঃপর আমরা গাড়িতে উঠলাম। পেছনের সিটটা পুরোই পর্বতরাজকৠছেড়ে দেয়া সমীচীন মনে করলাম। আমার মত মুষিকাকৃতঠ¿à¦° জন্যে ড্রাইভারেঠ° পাশের সিটটাই যথেষ্ট। ও হ্যাঁ বলতে ভুলে গেছি, তন্ত্ররাজৠর গাড়ির দু পাশে দুটি মোটরবাইক বাহিত চামচা আমাদের সঙ্গে সারা রাস্তা এলো এবং সারাদিন তন্ত্ররাজৠর পায়ে পায়ে ঘুরতে থাকলো।

ফ্যাক্টরিঠে পৌঁছে একটু নিরাশ লাগলো। অত বড় ইউনিভার্সঠ¿à¦Ÿà¦¿, এত ঠাটবাট আর তাদের ফ্যাক্টরি দেখে আমার মনে হলো যেন স্মল স্কেল ইন্ডাস্ট্ঠির কোনো ছোট্ট কারখানা। যাই হোক ভেতরে দেখলাম, আলাদা আলাদা সেকশন আছে, যেমন এক জায়গায় র-মেটিরিয়াঠ², (বেশিরভাগই গাছপাতা) ধোয়া হচ্ছে, কোথাও সেগুলো কাটা বাছা হচ্ছে, এইরকম। প্রতিটি সেকশন-এরই সংস্কৃত আর গুজরাটি মিশিয়ে উদ্ভট সব নাম। আমার যেটা আশ্চর্য লাগলো আধুনিক ওষুধ কারখানার কোনো যন্ত্রপাতি , কোনো ব্যবস্থাই নেই। যেমন এক জায়গায় দশটি শ্রমিক বসে হামানদিস্ত ায় কিসব পিষছে আরেক জায়গায় হাত দিয়ে গাছের ডাল থেকে পাতা ছিঁড়ছে। দেখতে থাকলাম আর গলায় মাছের কাঁটার মত বিঁধে থাকা খটকাটাকে গলাঃধকরণ করার চেষ্টা করতে থাকলাম।

এবার চা পর্ব। তন্ত্ররাজৠর অফিসে তিনি একটা ঢাউস চেয়ারে ব্যাঘ্র চর্মের আসনে বসেন। সেখানে বসে চা আর ভীম প্রমাণ স্ন্যাকসেঠ° শ্রাদ্ধ করলেন তান্ত্রিক বৈদ্য। এইসময় আমি ওঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, "আচ্ছা ডক্টর (তন্ত্ররাজৠর এই সম্বোধনটাঠপছন্দ), এখানে সব মাল মশলার স্ট্যান্ডা রডাইজেশন কোথায় হয়?" এর উত্তরে তিনি মৃদু হেসে সসেজ সদৃশ মোটা অঙ্গুলি নির্দেশ করলেন নিজের ফুটবল সদৃশ মাথার দিকে। তার মানে সবই ওঁর ওই বিরাট ফুটবলের মধ্যেই আছে। আমি প্রমাদ গণলাম।
এর পরে খুব গোপন কথা বলার ভঙ্গীতে আমাকে বললেন, "লাহারী সাব অব ম্যায় আপ কো আপনা ফ্যাক্টরি কা সব সে সিক্রেট ওপরেসন à¦¦à¦¿à¦–à¦¾à§Ÿà§‡à¦™à§à¦—à §‡à¥¤"

উত্তেজনায় আমি তো চনমনিয়ে উঠলাম।'সবসৠ‡ সিক্রেট ওপরেসান'! না জানি সে কি হবে?

তারপর আমাকে নিয়ে গেলেন পেছন দিকে একটা বিরাট শেডে। সেখানে সার সার ছটা বড় বড় উনুন। উনুন না বলে সেগুলোকে বড় বড় ভাটা বলাই উচিত। ধৈর্যপূর্ঠক এরপরে আমাকে যা বোঝালেন তা হলো ওই ভাটিগুলোয় তিনটের মধ্যে লেড অর্থাৎ সিসে আর তিনটেতে মার্কারি অর্থাৎ পারা কে শুদ্ধ করা হচ্ছে। দেখালেন ছোট ছোট এয়ার গানের পেলেটের মত গুলি সব পুড়ছে আগুনে। আমার তো বুক ছাঁত করে উঠলো, হায় ভগবান, এই ওষুধে এগুলো মেশানো হবে? (মানুষের শরীরের জন্যে তিনটে হেভি মেটাল চরম বিষাক্ত। সেগুলো হলো, লেড, মার্কারি আর ক্যাডমিয়াঠ)। আর এই 'সুচল' ট্যাবলেটে এইভাবে এগুলো মেশানো হবে?

আমি অনেকক্ষণ দোনোমনো করে শেষ পর্যন্ত জিজ্ঞেস করেই ফেললাম। "ডক্টর লেড আর মার্কারি তো ভীষণ বিষাক্ত, তো এগুলো... "

তন্ত্ররাজ আমার দিকে একটি বক্র কৃপাদৃষ্টঠহানলেন এবং বললেন, "লাহারী সাব, আপ কো পতা নেহি, হামারে রসায়ন শাস্ত্র মে ইন চিজো কা ভিশ নিকালনে কা তরিকা ভি হ্যায়। চলিয়ে আপ কো দিখাতে হ্যায়।"

বলে তিনি যা দেখালেন, তাতে আমার আক্কেল গুড়ুম হয়ে গেলো। এক জায়গায় কতকগুলো চাটাই এর ওপরে কয়েকশো ওই গুলিগুলো ছড়িয়ে রাখা আছে আর সেগুলোকে সাদা রঙের এক তরল পদার্থ দিয়ে ধোয়া হচ্ছে। আর তার পাশে আরো বড় বড় চাটাই এর ওপরে আরো গুলি শুকোতে দেয়া আছে। তন্ত্ররাজ এবার বললেন, "পতা হ্যায় কিস চিজ সে ধুল রহে হ্যায় 'সুচল' কি গোলি? কালি গাই কি দুধ সে। আওর উসকে বাদ উধার দেখিয়ে, ইসকো à¦¸à§à¦–à¦¾à§Ÿà§‡à¦™à§à¦—à §‡, চন্দ্রালোঠসে। ধুপ মে নাহি, চাঁদ কি রোশনি সে।"

আমি বাকরুদ্ধ। এবার বুঝলাম ফ্যাক্টরি টা ওইরকম কেন। হাজার বছর আগে যা লেখা ছিলো অন্ধের মত ঠিক সেগুলোকে হবহু নকল করার চেষ্টা করছে এরা। সেদিনের উপাদানগুলৠ‹ নিয়ে আজকের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি এবং à¦Ÿà§‡à¦•à¦¨à§‹à¦²à§‹à¦œà¦¿à ¦° সাহায্য নিয়ে আধুনিক ভাবে তার মূল্যায়ণ বা প্রয়োগ করার কোনো চিন্তাই নেই। এটাও বুঝলাম যে এই পর্বত প্রবরের কাছে এসব বলে কোনো লাভ নেই।
সেদিন রাত্রে হায়দ্রাবাদ ের ট্রেনে চড়লাম মহা দুশ্চিন্তা নিয়ে। চাকরিটা থাকবে তো?

হায়দ্রাবঠ¾à¦¦à§‡ ফিরে

সাধারণত ট্রেনে আমি দারুণ ঘুমাই। কিন্তু সেই রাতে হায়দ্রাবাদ ফিরতি পথে ট্রেনের ঘুমপাড়ানি দুলুনি, এসি ফার্স্ট ক্লাসের নিশ্চিন্ত আরাম কিছুতেই কিছু হল না। মাথায় ঘুরতে লাগলো, à¦à¦•à§à¦¸à¦¿à¦•à¦¿à¦‰à¦Ÿà ¿à¦­ à¦¡à¦¿à¦°à§‡à¦•à§à¦Ÿà¦°à¦•à ‡ কি বলবো? ট্যুর রিপোর্টে কি লিখব? যদি বলি যে এই প্রোডাক্ট লঞ্চ করা ঠিক হবে না, কেমন ভাবে নেবেন উনি? এদিকে মার্কেটিং এর প্রস্তুতি অনেক দূর এগিয়ে গেছে, প্রোডাক্ট লোগো, লেবেল ডিজাইন সব শেষ। শীঘ্রই প্রিন্টিং এ যাবে। আমাদের লঞ্চ স্টোরিও প্রায় রেডি (যাতে ডাক্তাররা ঝপাঝপ লেখে আর পেশেন্টরা কপাকপ খায়)। নাকি বলব সব দারুণ হচ্ছে। সব কিছু বলে ওঁর ওপরেই ছেড়ে দেবো? আমার কি? আমি তো প্রোডাক্ট ম্যানেজার মাত্র। যা করছি উর্দ্ধতনদৠর আদেশানুসাঠ°à§‡à¥¤

সঙ্গে সঙ্গে এও ভাবতে লাগলাম, যে হেভি মেটালের বিষক্রিয়াঠে বলা যায় ধীরগতিতে মৃত্যুর পরোয়ানা। অনেক রকম বিষাক্ত পদার্থ বিভিন্নভাব ে আমাদের শরীরে যায় কিন্তু বেশিরভাগই তেমন ক্ষতি করতে পারেনা কারণ শরীরে সেগুলোকে নির্বিষ (ডিটক্সিফাঠ‡) করার অনেক উপায় আছে আর কিডনি এবং এক্সক্রিটঠ°à¦¿ সিস্টেমের এর অন্যান্য রাস্তা যেমন ঘাম, ইত্যাদির মধ্যে দিয়ে ধীরে ধীরে শরীরের বাইরে বার করে দেওয়া যায়। কিন্তু এই তিনটি ভারী ধাতু এমন পাজি বস্তু, এদের না যায় ডিটক্সিফাঠকরা, না যায় বার করে দেওয়া। ধীরে ধীরে শরীরের বিভিন্ন টিস্যুতে, বিশেষত হাড়ের ভেতরে মজ্জায় জমা হতে থাকে। রক্ত তৈরিতে ভয়ানক বাধা দেখা দেয়। কিডনির সূক্ষ্ম জালি গুলো ভারী ধাতুর ভারে à¦›à¦¿à¦à§œà§‡à¦–à§à¦à§œà ‡ যেতে থাকে। কিডনি অকেজো হয়ে পড়ে।

এ ব্যাপারে আমার ভালো করে জানার একটা কারণ হলো যে এই à¦ªà§à¦°à¦œà§‡à¦•à§à¦Ÿà§‡à ° ঠিক আগেই আমি আরেকটি প্রজেক্টে কাজ করছিলাম। সমুদ্র দূষণের কারণে সামুদ্রিক মাছ এবং আরো অন্যান্য প্রাণীর দেহে এই হেভি মেটাল জমা হয়। বেশী পরিমাণে সি-ফুড খেলে মানুষের দেহে তাদের বিষক্রিয়াঠসম্ভাবনা থাকে, এই ব্যাপারে বিশদ জানার জন্য গোয়ার ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউঠŸ অফ à¦“à¦¸à§‡à¦¨à§‹à¦—à§à¦°à¦¾à ¦«à¦¿à¦° সঙ্গে কাজ করছিলাম। আর এখানে তো দেখে এলাম সুচল এর এক একটা গুলিতে অন্তত 50 মিলিগ্রাম সিসে আর পারা দেওয়া হচ্ছে! পরের দিন অফিসে পৌঁছলাম এই দুশ্চিন্তা নিয়ে, কি রিপোর্ট দিই? কোনো সিদ্ধান্তৠতখনো আসতে পারিনি।

অফিসে পৌঁছে একটা সুখবর পেলাম। 'ইডি' সাহেব বিদেশে ট্যুরে, প্রায় এক সপ্তাহ পরে ফিরবেন। তখন ই-মেল তো ছিলোনা কাজেই এক সপ্তাহ সময় পাওয়া গেলো। ভাবলাম আমার নিজের বসের সঙ্গে একটু কথা বলি। উনি ছিলেন শক্তপোক্ত চেহারার মানুষ আর চরিত্রেও à¦¶à¦•à§à¦¤à¦ªà§‹à¦•à§à¦¤à ¤ আমার ওপর খুব বিশ্বাস ছিলো, লাগাম ছেড়ে রাখতেন। এখুনি দেখা করতে চাই শুনে একটু আশ্চর্য হলেও সেদিন সন্ধ্যায় ডাকলেন আমাকে। ধৈর্য ধরে সব শুনলেন। তারপরে সোজাসুজি আমার চোখে, তাকিয়ে বললেন, "সুপ্রিয় আপনি তো জানেন, আমি মাঠে ঘাটে দৌড়োনোর লোক, সায়েন্স টায়েন্স ভালো বুঝি না। আপনার যা ঠিক মনে হয়, তাই করুন, আর আমি জানি যে আপনি ঠিক কাজই করবেন।"

অতঃপর কালো লোহার চাটুর মত মুখমন্ডলে ঝকঝকে সাদা দশ পাটি দাঁত দেখিয়ে একটা হাসি আর হ্যান্ডশেঠ। অদ্ভুত তো! সেদিন অফিস থেকে বেরোবার আগে 'ইডি'র à¦¸à§‡à¦•à§à¦°à§‡à¦Ÿà¦¾à¦°à ¿ টিনা এক টুকরো মধুর ভ্রু ভঙ্গিমা সহযোগে বলে গেলো,
"Hi blue eyed boy, (আমাকে নানান নামে টিজ করতো এই সুন্দরী) are we getting delayed with our tour report this time? ‘He’ has asked me to remind you."

আর কোনো উপায় নেই। সেই রাতে বাড়ি ফিরে রিপোর্ট লিখতে বসলাম। ভেবেছিলাম যে একটা ধরি-মাছ- না- ছুঁই- পানি গোছের কিছু লিখে দেবো। যাতে তথ্য সবই থাকবে (সিসে পারা এইসব ব্যবহার করা হচ্ছে ইত্যাদি) কিন্তু আমার কোনো মন্তব্য থাকবে না। ওপরওয়ালারঠ¾ পড়ে যা সিদ্ধান্ত নেন তাই শিরোধার্য করবো। কিন্তু লিখতে লিখতে বুঝলাম, কলম বাঁক নিয়েছে উল্টোদিকে! তার যেন নিজস্ব মন আছে, লিখে চলেছে, পুঙ্খানুপৠà¦™à§à¦– ভাবে, যে ফ্যাক্টরিঠি অত্যন্ত নীচু মানের, সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিঠরীতিতে কিভাবে হেভি মেটাল মেশানো হচ্ছে, যদি পেশেন্টরা এই ওষুধ খেতে থাকে কী কী বিপদের সম্ভাবনা আছে, তেমন হলে কোম্পানির ওপরে তার দায় কিভাবে বর্তাতে পারে সব। এমনকি ইনস্টিটিউঠŸ অফ à¦“à¦¸à§‡à¦¨à§‹à¦—à§à¦°à¦¾à ¦«à¦¿à¦° রেফারেন্স পর্যন্ত দিয়ে বিশদ ব্যাখ্যানॠপরে এটাও জুড়ে দিলাম যে আয়ুর্বেদে অসংখ্য চিকিৎসাগুঠ£ সম্পন্ন ভেষজের উল্লেখ আছে। এবং কোনো ফার্মাসিইঠটিকাল কোম্পানি যদি এমন সব রোগ বেছে নেয় যেখানে এলোপ্যাথিঠদৌড় বেশী দূর নয়, যেমন আর্থ্রাইটঠ¿à¦¸, হাঁপানি ইত্যাদি, এবং আধুনিক বৈজ্ঞানিক মতে এইসব রোগে ব্যবহৃত ভেষজের ওপর রিসার্চ করে তাহলে তার ব্যবসায়িক মূল্য হতে পারে অসাধারণ। সামাজিক মূল্যও কম হবে না। শেষ করে পেন বন্ধ করে তিন রাত্রির পরে নিশ্ছিদ্র নিশ্চিন্ত ঘুমে তলিয়ে গেলাম।

পরের দিন সকালে আর দেখাশুনো নয়, রিপোর্ট নিয়ে সোজা 'ইডি'র à¦¸à§‡à¦•à§à¦°à§‡à¦Ÿà¦¾à¦°à ¿à¦° টেবিলে। সেই সুন্দরী আরেক অপরূপ ভ্রূভঙ্গী করে আমাকে বললো, "Hi handsome, did you delay your report just to meet me once more?"

রিপোর্টের ভূতটাকে মাথা থেকে কাগজে নামাতে পেরে আমার তখন মেজাজ ফুরফুরে, মুচকি হেসে চোখ টিপে দিয়ে পেছন ফিরে পালানোর আগেই, চোখের কোণ দিয়ে দেখতে পেলাম চোখ গোল গোল করে সে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আর শুনতে পেলাম তার খিলখিল হাসি। সব ট্যুর রিপোর্টের এর এক কপি জমা দিতে হতো এইচ-আর, অর্থাৎ হিউম্যান রিসোর্স ডিপার্টমেঠ্টে। খুব সম্ভবত লিকটা সেখান থেকেই হলো, কারণ লাঞ্চের সময় থেকেই দেখি, অফিসের বেশিরভাগ লোকজন আমাকে এড়িয়ে যাচ্ছে। সামনে পড়ে গেলেও চোখ মেলাচ্ছে না, পাশ কাটাচ্ছে। প্ৰথমে একটু অবাক হয়ে গেলেও পরে বুঝতে পারলাম কানাঘুষোয় সবাই জেনে গেছে যে আমি 'সুচল' এর বিরুদ্ধে রিপোর্ট দিয়েছি। তাদের খুব দোষ দেওয়া যায়না কারণ গত তিন মাস ধরে সারা কোম্পানি মেতে উঠেছিলো 'সুচল' লঞ্চ নিয়ে আর সবাই জানতো যে সর্বশক্তিঠর 'ইডি' সাহেব তাঁর সর্বশক্তি নিয়োগ করেছেন এই à¦ªà§à¦°à¦œà§‡à¦•à§à¦Ÿà§‡à ° পেছনে। আমার রিপোর্ট জমা দেওয়ার ঘটনা এক বৃহস্পতিবা র আর তিনি ফিরবেন সোমবার। কি করে যে মাঝের এই তিনটে দিন কাটালাম, আমিই জানি।


রিপোর্ট

সোমবার অফিস গেলাম দুরুদুরু বক্ষে। কোনো কাজেই মন à¦²à¦¾à¦—à¦›à¦¿à¦²à§‹à¦¨à¦¾à ¤ কোনো রকমে প্ৰথম টি-ব্রেক পর্যন্ত সময় কাটিয়ে কপাল ঠুকে ইন্টারকম তুলে টিনা, মানে 'ইডি'র à¦¸à§‡à¦•à§à¦°à§‡à¦Ÿà¦¾à¦°à ¿ কে ফোন করলাম। ফোনের ডিসপ্লে তে আমার এক্সটেনশন নাম্বার দেখেই স্বভাবসিদ্ ধ ভঙ্গীতে টিনার অভ্যর্থনা, "Good morning sweet. I suspect you can't wait to see me."

কিন্তু আমার মনের অবস্থা তখন সঙ্গীন, মিষ্টি মিষ্টি খুনসুটিতে নেই। উৎকণ্ঠা চেপে যতদূর সম্ভব স্বাভাবিক গলায় বললাম, "Good morning Tina. Is there any message for me?"

"Nothing till now, blue eyed boy. If there's one, I'll personally come and fetch you, hee hee..."

থ্যাংকিউ বলে ফোন ছেড়ে দিলাম। সারা দিনটা কাটলো রুদ্ধশ্বাস উৎকণ্ঠায়। সন্ধে সাতটা নাগাদ জিনিসপত্র গুছিয়ে উঠতে যাবো, টিনার ফোন, "Supriyo can you come please. ED wants to see you."

গলায় খুনসুটির লেশমাত্র নেই, একেবারে ম্যাটার অফ ফ্যাক্ট, নৈর্ব্যক্ঠিক সুর। যদিও তখন প্রায় সন্ধে আটটা, দেখলাম 'ইডি'র ঘরের সামনে à¦¸à§‡à¦•à§à¦°à§‡à¦Ÿà¦¾à¦°à ¿à¦° চেয়ারে টিনা তখনো বসে। আমি পৌঁছতে, শুধু মুখ তুলে ছোট্ট করে ঘাড় নাড়লো। আমি দরজায় নক করে ঢুকলাম, দেখলাম ডিরেক্টর সাহেব নিজের চেয়ার ছেড়ে পেছনের বিরাট কাঁচের জানলা দিয়ে হুসেন সাগর লেকের পাশের আলো ঝলমল রাস্তাটার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।

"Good evening Sir."

কোনো উত্তর নেই। সাধারণত ঘরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে ভদ্রলোক বলেন, "Come, Supriyo sit down." আজ শুধু শীতল নৈঃশব্দ্য। কী করবো বুঝতে না পেরে আমিও দাঁড়িয়ে রইলাম। প্রায় এক মিনিট পরে উনি পেছন ফিরলেন আর কোনো ভণিতা না করেই জিজ্ঞাসা করলেন,
"Are you 200% sure about what you've written in the report?"

"Yes sir," নীচু গলায় বললাম আমি।

"Are you এ Doctor?" 'ইডি', বেশ গলা চড়িয়ে।

এ প্রশ্নের কোনো উত্তর হয়না, কারণ উনি ভালোই জানেন যে আমি ডাক্তার নই। আমি চুপ করে রইলাম।

"Well are you a Doctor, Mr.Lahiry?"

নিজের পক্ষ সমর্থনে এটুকু বলতে পারি যে বোকার মত 'নো স্যার' বলিনি। আপাত ভাবে কোনো ঔদ্ধত্য না দেখিয়ে শুধু চোখে চোখ রেখে দাঁড়িয়ে ছিলাম। ওঁর চোয়ালের পেশী আরো একটু শক্ত হয়ে উঠলো, ঘুরে এসে চেয়ারে বসলেন। আমাকে বসতে না বলায় আমি দাঁড়িয়েই রইলাম।

"Listen I'm not going to throw away investments worth lakhs of rupees on the words of a Group Product manager."

কথাগুলোর ঝাঁঝ আমার চোখে মুখে আগুনের হলকার মত এসে লাগলো।

আমি চুপ। এই কথায় সম্মতি অসম্মতি জানানো অবান্তর।

আমার চোখে চোখ রেখে 'ইডি' পরের কথা গুলো বলে গেলেন এক নিঃশ্বাসেà¥
"You have to take doctor's opinions. Prepare a questionnaire and show it to me first thing tomorrow morning. Starting from tomorrow you will meet 15 rheumatologists personally, record their opinion and submit it on Saturday before lunch. Is that clear? You can go now."

পনেরো জন রিউম্যাটোঠ²à¦œà¦¿à¦¸à§à¦Ÿ! হায়দ্রাবাদ ে সেসময় ছিলেন কিনা সন্দেহ।

"Ok Sir" বলে বেরিয়ে এলাম। ফেরার পথে টিনার মুখের দিকে আর তাকাইনি। সেই ডাকলো, "Supriyo..." ঘুরে তাকাতে ছোট্ট একটা শুকনো হাসি হেসে, বাঁ হাতের বুড়ো আঙ্গুল তুলে যেন আমাকে বরাভয় দিলো। আমার মাথাটা নীচু হয়ে এলো, এইবার, এই দায়িত্বের চাপে। শুনশান অফিস থেকে বেরোলাম, স্কুটার স্টার্ট করে আকাশ পাতাল ভাবতে ভাবতে কখন বাড়ি পৌঁছে গেছি, সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় পৌঁছে গেছি জানি না। ঘোর কাটলো, শুনি কাকলি বলছে, "কী গো এত দেরী আজ?"

ইচ্ছে ছিলো খুলে বলি সব। কিন্তু রাজ্যের ক্লান্তি তখন দেহে মনে, শুধু বললাম, "ভীষণ কাজের চাপ।"

নাকেমুখে কিছু দিয়েই লেগে পড়লাম, রিউম্যাটোঠ²à¦œà¦¿à¦¸à§à¦Ÿà¦¦à§‡à¦° নাম ঠিকানা বার করতে। ইন্টারনেটৠ‡à¦° সুবিধা তো ছিলোনা, মোবাইল ফোনও না। ল্যান্ড লাইন থেকে এক এক করে বিভিন্ন হাসপাতালে ফোন করে, আর প্রফেশনাল চেনা জানাদের থেকে খোঁজ নিয়ে ঘন্টা তিনেক বাদে ন জন ডাক্তারের নাম পাওয়া গেলো যাঁদের রিউম্যাটোঠ²à¦œà¦¿à¦° ডিগ্রী আছে আর দুজন যাঁরা প্র্যাকটিঠকরেন রিউম্যাটোঠ²à¦œà¦¿à¦¸à§à¦Ÿ হিসেবে কিন্তু ওই স্পেশাল ডিগ্রীটি নেই। জানিনা সাহেবের আবার এঁদের পছন্দ হবে কিনা। এরপর শুরু করলাম à¦•à§‹à§Ÿà§‡à¦¶à§à¦šà§‡à¦¨à §‡à§Ÿà¦¾à¦° বানানোর কাজ। লিখতে কাটতে, লিখতে কাটতে রাত শেষ। কাকলি অনেক রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করে ঘুমিয়ে পড়েছিলো, ভোরবেলায় দু কাপ চা করে ওকে ডাকতে, অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো, "কি হয়েছে তোমার, এরকম তো আগে দেখিনি।"

"কিছুই না। বললাম না একটু কাজের চাপ আছে। এই প্রজেক্ট টা শেষ হয়ে গেলে আবার ঠিক হয়ে যাবে।"

অবিশ্বাস আর একটু ভয়ের চোখে তাকিয়ে রইলো। আমিও আর কথা না বাড়িয়ে অফিসের জন্যে তৈরী হতে চলে গেলাম।

অফিসে একটা থমথমে পরিবেশ, যদিও অফিসিয়ালি মাত্র কয়েকজন ব্যাপারটা জানে। আমি একটু তাড়াতাড়িই à¦ªà§Œà¦›à§‡à¦›à¦¿à¦²à¦¾à¦®à ¤ উদ্দেশ্য 'ইডি'এসে পড়ার আগে টিনার হাতে à¦•à§‹à§Ÿà§‡à¦¶à§à¦šà§‡à¦¨à §‡à§Ÿà¦¾à¦° আর ডাক্তারের লিস্ট টা ধরিয়ে দেওয়া। সোজা গেলাম ওনার ঘরের কাছে। আমাকে দেখেই টিনা ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে ইঙ্গিতে বললো, এসে গেছেন। তারপরে উঠে দাঁড়িয়ে আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে বললো, "He's come almost an hour early. I'm sorry, he's in a foul mood."

আমি ঘাড় নেড়ে দরজায় নক করতে যাবো, টিনা আমার হাতটা ধরে বললো, "And, Supriyo I've read your report. You have done the right thing."

ওর কথার শেষটা শুনে আমি আশ্চর্য হবার আগেই 'ইডি'র ঘরের দরজাটা খুলে গেলো আর ভদ্রলোক আমার দিকে বিরক্তি আর প্রশ্ন নিয়ে তাকাতেই আমি বললাম, "Sir, wanted to show you the questionnaire."

ঘরে ঢুকে খাম থেকে কাগজগুলো বার করে পড়লেন, তারপরে খামে আবার ঢুকিয়ে আমার দিকে প্রায় ছুঁড়ে দিয়ে বললেন, "So what are you waiting for?"

আমি খামটা নিয়ে প্রায় দৌড়ে চলে আসতে আসতে টিনার গলা শুনতে পেলাম, " All the best hero!"

রিউম্যাটোঠ²à¦œà¦¿à¦¸à§à¦Ÿà§‡à¦° খোঁজে বেরিয়ে পড়লাম। মনে অনেক কথাই ভীড় করছিলো। বিশেষত 'ইডি'র ব্যবহার! এই সেদিন পর্যন্ত আমি ছিলাম ব্লু-আইড-বয় আর আজ! যেন কয়েক দিনের মধ্যে কোনো মন্ত্র বা তন্ত্র বলে যে মূষিক ছিলাম আবার তাই হয়ে গেছি।

পরের তিনটে দিন, কাটলো অপরিসীম যন্ত্রনায়। এক একটা হসপিটালে যাই, যে ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করার কথা তাঁকে কার্ড পাঠিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকি। কখনো কল আসে, কখনো আসে না। কখনো এসেও কোনো লাভ হয় না। বৃহস্পতিবা র সন্ধ্যায় অফিসে ফিরে হিসেব করে দেখি, যে মোট এগারো জন রিউম্যাটোঠ²à¦œà¦¿à¦¸à§à¦Ÿà§‡à¦° মধ্যে আমার দশ জনকে ট্রাই করা হয়ে গেছে। দুজন শহরের বাইরে। দুজন অনেক বার চেষ্টা করা সত্বেও দেখা করেননি। বাকি চার জনের মধ্যে দু-জনের কোনো মতামত নেই এ ব্যাপারে। রইলো বাকি দুই। একজন সিনিয়র রিওউম্যাটৠ‹à¦²à¦œà¦¿à¦¸à§à¦Ÿ যা বলেছেন তার সারমর্ম হলো, 'à¦†à§Ÿà§à¦°à§à¦¬à§‡à¦¦à¦¿à • বা অন্য কোনো ট্র্যাডিশন াল সিস্টেমের ওষুধ ব্যবহারে তাঁর কোনো আপত্তি নেই।' হেভি মেটালের বিষক্রিয়াঠকথা বলায়, এক ফুৎকারে উনি সেটা উড়িয়ে দিলেন। শুধু একজন ডাক্তার স্পষ্ট মতামত দিয়েছেন, যে ওষুধ কিভাবে কাজ করবে জানেন না, তিনি তা ব্যবহার করেন না, করবেনও না। ট্র্যাডিশন াল সিস্টেমের এর কোনো ওষুধের যদি আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুযায়ী ট্রায়াল ইত্যাদি হয়ে থাকে, তবেই করবেন।

কাল খালি আরেকটা হসপিটাল যাওয়া বাকি আছে। কাজ শেষ করে বসে ভাবছিলাম যে এখানকার পাট বোধহয় এবারে শেষ হলো। কাল থেকে চাকরির এপ্লিকেশন ছাড়া শুরু করতে হবে। উঠবার আগে কাগজপত্র গোছাতে গিয়ে দেখি টেলিফোনের গায়ে একটা হলুদ পোস্ট-ইট নোট, লেখা আছে, "Hi handsome, I know you'll do it."

এই দুশ্চিন্তা র মধ্যেও এক চিলতে হাসি আমার মুখে এসেই মিলিয়ে গেলো বুঝতে পারলাম।
শুক্রবার, আমার মতামত সংগ্রহের শেষ দিন। যেখানে যাবো সেটা হায়দ্রাবাদ ের সবচেয়ে বড় হাসপাতালগৠলোর মধ্যে একটা। পৌঁছে রিসেপশন কাউন্টারে গিয়ে খোঁজ করতে আরেক বজ্রপাত। রিসেপশন থেকে বললো যে কিছুদিন হলো রিউম্যাটোঠ²à¦œà¦¿ ডিপার্টমেঠ্ট বন্ধ আছে। কবে খুলবে কোনো ঠিক নেই! শেষ খড় কুটোটাও গেলো। ডাক্তারের নাম ধরে জিজ্ঞাসা করলাম তাঁকে পাওয়া যাবে কিনা। উত্তর পেলাম, তিনি অনির্দিষ্ঠকালের জন্যে ছুটিতে আছেন।

আমার মাথাটা কি একটু ঘুরে উঠলো?

উদ্দেশ্যহৠ€à¦¨ ভাবে এদিক ওদিক পায়চারি করতে করতে সামনে ক্যান্টিন দেখে ঢুকলাম। এক কাপ কফি খেয়ে একটা সিগারেট তো খাওয়া যাক। কফি নিয়ে টেবিলে বসেছি হঠাৎ শুনলাম, "May I have a word with you?"

মুখ তুলে তাকিয়ে দেখি দেখে কুড়ি বছরের বেশি বয়েস মনে হয়না, এক চ্যাংড়া ছোঁড়া সামনে দাঁড়িয়ে। অনুমতির অপেক্ষা না করেই বসে পড়লো সামনের চেয়ারে।
"আপনি ওই রিউম্যাটোঠ²à¦œà¦¿à¦¸à§à¦Ÿà§‡à¦° ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করছিলেন? উনি তো এখন সাসপেন্ডেঠ¡à¥¤ মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার à¦‡à¦¨à¦­à§‡à¦¸à§à¦Ÿà¦¿à¦—à ‡à¦¶à¦¨ চলছে ওঁর ওপরে। আর হসপিটালের বিরুদ্ধে দশ কোটি টাকার à¦•à¦®à§à¦ªà§‡à¦¨à¦¸à§‡à¦¶à ¨à§‡à¦° কেস এসেছে।" এইবার মাথাটা সত্যিই ঘুরে উঠলো। আমার হতভম্ব ভাবকে পাত্তা না দিয়ে সে বলে চললো, "নিজামাবাদ জেলার এক ছোট আয়ুর্বেদিঠ• কোম্পানির ওষুধ উনি বছর দুয়েক ধরে খুব ব্যবহার করতেন। অনেক পেশেন্টকে দিয়েছেন। সেইসব à¦ªà§‡à¦¶à§‡à¦¨à§à¦Ÿà¦¦à§‡à ° অনেকেরই কিডনি ফেল করেছে। চার জন পেশেন্ট মিলে ওনার এবং হসপিটালের বিরুদ্ধে কেস করেছে।"

আমার মাথা গুলিয়ে জগাখিচুড়িঠ° অবস্থা। কোনোমতে সামলে নিয়ে বললাম, "কিন্তু তুমি কে? আর এসব যে বলছো তার কোনো প্রমাণ আছে?"

ছেলেটি বললো যে ও রিউম্যাটোঠ²à¦œà¦¿ ডিপার্টমেঠ্ট-এর রেসিডেন্টॠ¤ বলে পকেট থেকে একটা তেলুগু খবরের কাগজের কাটিং বার করলো। ছোট্ট একটা খবর, তিন দিন আগেকার। আক্ষরিক অনুবাদ করে শোনালো, ঠিক ও যা বলেছে তাই। চারজন পেশেন্টের নাম ও দেওয়া আছে। তার মধ্যে একটা নাম, ডেভিড পিন্টো। নামটা শুনে কেমন একটা খটকা লাগলো, কিন্তু কিছুতেই ভেবে পেলামনা, কেন? আমি ওকে জিজ্ঞাসা করলাম যে এমন খবর অন্যান্য কাগজে বেরোয়নি কেন? এই কথা শুনে চারিদিকে তাকিয়ে এমন একটা বেঁকা হাসি হাসলো, তার একটাই অর্থ হয়। হাসপাতাল কৌশলে খবরটা চেপে রেখেছে।

"তো তুমি আমাকেই বা বললে কেন?" আমি জিজ্ঞাসা করলাম।

"আপনি যখন গত পরশু ডক্টর রাওকে (আমার লিস্টের আরেকজন ডাক্তার) ইন্টারভিউ করছিলেন, আমি ওনার পাশেই বসেছিলাম। মনে হলো আপনি ফার্মা ইন্ডাস্ট্ঠির হয়ে এর ওপরে কিছু রিসার্চ করছেন। আমার সিনিয়র সামনে ছিলেন তাই ওখানে কিছু বলতে পারিনি। আজ যখন এখানে আপনাকে দেখলাম তখন মনে হলো আপনার এটা জানা উচিত। প্লিজ কাউকে বলবেননা যে আপনি আমার কাছে জেনেছেন।"
আমার তখন একটাই চাহিদা। এই ওষুধটার একটা বোতল অন্তত। দৌড়ে বেরিয়ে স্কুটার তুলে সোজা ওষুধের হোলসেল মার্কেট। সেখানে আমাদের সবচেয়ে বড় যে স্টকিস্ট তাকে নামটা দিয়ে বললাম যে এই ওষুধটা পাওয়া যাচ্ছেনা, আমার খুব দরকার। সে ভদ্রলোক কিছুই জানে না। সরল মনে তিনদিকে তিনটে লোককে পাঠিয়ে আধ ঘন্টার মধ্যে দুটো বোতল এনে দিলো। তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে ওষুধ গুলো নিয়ে বাড়ি ফিরলাম।

আরেকটা রাত গেলো এই সার্ভের রিপোর্ট লিখতে। অনেক দোনামনা করে শেষ পর্যন্ত শেষ লাইনে লিখলাম, "In the light of this incidence, it will be best to conduct a quantitative analysis to ascertain the composition in detail. In case lead and mercury are found in quantities beyond safe limits, it may not be prudent to launch this product."

শেষের লাইনটা লিখে মনে হলো নিজের হাতেই নিজের টার্মিনেশঠলেটারই লিখলাম বোধহয়। পরের দিন শনিবার সকালে অফিস পৌঁছে রিপোর্ট খাম বন্দী করে ওষুধের স্যাম্পল দুটো সঙ্গে দিয়ে টিনার টেবিলে গিয়ে রেখে বললাম, "Please give this to him, when he arrives." বেচারী আমার চোখমুখের অবস্থা দেখে বোধহয় আর কিছু বলার সাহস করল না। আমিও ওখান থেকে বেরিয়ে সোজা বাড়ির রাস্তা ধরলাম। এখনো অনেক কাজ। সবচেয়ে বড় কাজ চাকরির এপ্লিকেশন পাঠানো।

এর পরের গল্প খুব সংক্ষিপ্তॠ¤ সোমবার যে কোনো ভাবেই হোক, ওই হাসপাতালেঠখবরটা সব মেইনস্ট্রঠ¿à¦® মিডিয়াতে ফলাও করে বেরোলো। যদিও আমার তাতে কিছুই লাভ হল না। আমাকে 'ইডি'আর ডাকেননি। বুঝলাম যে 'সুচল' অচল হয়ে গেছে আর আমি হয়েছি স্কেপগোট। কাজেই কার্যত এই কোম্পানিতৠ‡ আমিও এখন অচল।

বেশিদিন থাকতে হয়নি। আমার বসের চেষ্টায় আর à¦°à§‡à¦•à¦®à§‡à¦¨à§à¦¡à§‡à ¦¶à¦¨à§‡ মাস দুয়েকের মধ্যেই বম্বে মানে ফার্মা ইন্ডাস্ট্ঠির পীঠস্থানে আমার তখনকার কোম্পানির চেয়ে একটু ছোট কোম্পানিতৠ‡, কিন্তু তখনকার চেয়ে উঁচু পজিশনে (এসিস্ট্যাঠ্ট জেনারেল ম্যানেজার) সুযোগ পেয়ে গেলাম। আমার শেষ দিনে ডিপার্টমেঠ্টের কলিগরারা একটা ছোট à¦«à§‡à§Ÿà¦¾à¦°à¦“à§Ÿà§‡à¦²à ‡à¦° ব্যবস্থা করেছিল। যারা আমার সঙ্গীন মূহুর্তে কোনো ভাবেই সাহায্য করেনি, তারা সব এসে ভালো ভালো কথা বলল। অনেক হাততালি পড়ল, ছোটখাট খাওয়া দাওয়া ও হল। পার্টি যখন ভেঙে আসছে হঠাৎ সেখানে টিনার আগমন। এসে সোজা আমার চেয়ে অন্তত বছর দশেকের ছোট, গোটা অফিসের হার্টথ্রব, টিনা দু-হাতে আমার মুখটা ধরে আমার কপালে সশব্দে এক চুমু খেলো আর তারপরে আমার হাতটা ধরে সবার দিকে ঘুরে আমাকে বললো, "Handsome, you're my hero. Thank you for fighting for David. He was my brother."

ডেভিড? বিদ্যুতের মত আমার মাথায় খেলে গেলো। ডেভিড পিন্টো, সেই পেশেন্ট! টিনার পুরো নাম তো টিনা পিন্টো! তাই নামটা শুনে আমার ওমন খটকা লেগেছিলো। কিন্তু "Was?"

প্রশ্নটা আর করতে হলোনা, আমার মুখে লেখা প্রশ্ন পড়ে নিয়ে টিনা বললো, "Yes. Was. He is no more, the kidneys were completely destroyed."

বলতে বলতে ওর চোখ থেকে এক ফোঁটা জল টুপ করে আমার হাতে পড়লো। সে জলের দাম কিন্তু অনেক।

অলংকরণঃ কল্লোল রায়






ফেসবুক মন্তব্য

Copyrights © 2016 All Rights Reserved by বম্বেDuck and the Authors
Website maintained by SristiSukh CMS
kusumarghya@yahoo.com